গল্প- নিরন্তর ভালোবাসা
* আজ আকাশ এ হালকা মেঘ জমেছে।তবে যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।ভাগ্যিস মা ছাতাটা দিয়েছে ।না হলে কি বিপদেই না পরতাম। যাই হোক-আমি কাব্য।রাজশাহী থেকে বগুড়া যাচ্ছি। আমার বাড়িতে। বাসে উঠলাম।গাড়ি চলতে শুরু করল। আমার সবসময়ই দূরের যাত্রা খুব ভাল লাগে। তাই জানালার পাশে বসে বাইরে প্রকৃতি দেখছিলাম। বাসে যাত্রি সংখ্যা অনেক কম। তাই এমন কেউ নেই যে কথা বলে সময় কাটাব। একটুপর হঠাত কেমন জানি কারও কান্নার শব্দ কানে আসছিল।প্রথমে মনের ভূল ভেবে উড়িয়ে দিলেও আস্তে আস্তে শব্দটা পরিষ্কার হতে লাগল। খেয়াল করলাম কান্নার গলাটা একটা মেয়ের। আসছে ঠিক আমার সিটের একদম শেষের সিট থেকে।যেহেতু সময়টা সন্ধ্যার পর তাই অন্য কেউ ব্যাপারটা দেখেনি।আমি কি হল দেখতে পেছনে গেলাম।আসলে মেয়েটা এত মায়া দিয়ে কাদছিল যে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। যাই হোক-গিয়ে দেখি একা একটা মেয়ে লাল শাড়ি পরা।বসে বসে কাদছে। প্রথমে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।শেষমেষ জিজ্ঞেস করলাম-- -Excuse me..আপনি কাদছেন কেন??? -সরি., আপনি কে??(কান্না মাখা চোখে তাকিয়ে বলল) -জি,,আমি সামনের সিটে বসেছি।আপনি কাদছেন তাই জিজ্ঞেস করছি। -সেটা কি আপনাকে বলতে হবে? -আপনার ব্যাপার।আপনাকে দেখে মায়া হল।তাই জিজ্ঞেস করলাম। -আপনাকে কেন বলব? -ঠিক আছে বলতে হবে না।সরি টু ডিস্টার্ ইউ। এই বলে নিজের সিটে চলে এলাম। কি অদ্ভুত মেয়েটা!!!তবে যথেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু নিজের কষ্ট চেপে রেখেছে।এসব ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা ভাব এসেছে এমন সময় পেছন থেকে সেই মেয়েটা ডাকছে। -এই যে মিঃ শুনছেন। -আমি ভদ্রতার খাতিরে কাছে গিয়ে বললাম- জি বলুন -আমি দুঃখিত।আপনার ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি ।(কান্না থেমে গেছে) -ইটস ওকে। -একটা হেল্প করবেন? -বলুন -আমি পানি খাব।পানি পাওয়া যাবে কি? - জি আমার কাছেই আছে।এই বলে আমার পানির বোতলটা ওনাকে দিলাম।যাই হোক একটা মেয়ের আবতার তো আর ফেলা যায় না। মেয়েটা পানি খেয়ে শান্ত হল।আর বলল -আপনাকে অনেক ধন্যবাদ -ইউ আর ওয়েলকাম।আচ্ছা এখন কি বলা যাবে,আপনি কাদছিলেন কেন?? মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ।তারপর বলা শুরু করল -আমি কলি,রাজশাহীতে আমার বাড়ি।আসলে আমি একটা ছেলেকে খুব ভালবাসতাম।কিন্তু বাসায় আমাদের মেনে না নেয়াই আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। কিন্তু বাসে ওঠার আগে ও আমাকে বলল আমি একটু আসছি।এই বলে কোথায় যে গেল আর এল না। এদিকে আমিওএকা পরে গেলাম। এখন কি করব কোথায় যাব? কিছুই বুঝতে পারছি না।তাই কাদছিলাম। -আচ্ছা আপনি কি ওনাকে ফোন করেছিলেন? - বাসা থেকে এত তারাতারি বের হয়েছি যে নিজের ফোনটাও নিতে ভূলে গেছি। -আচ্ছা আমার ফোন থেকে ফোন করুন। -ফোন বন্ধ বলছে। -তা হলে আর কি করার।আপনি বাড়ি ফিরে যান। আর তাছাড়া আপনার এভাবে আসাটা উচিত হয়নি। -কিভাবে যাব?আমার কাছে যা ছিল তা তো ওকেই দিয়েছি। -হুম..বুঝেছি।আচ্ছা যদি আমাকে বন্ধু ভাবেন তাহলে একটা কথা বলি? -বলুন -আসলে আপনি যাকে ভালবাসতেন,সে ছিল একটা ভন্ড প্রতারক।সে শুধুই আপনার থেকে সম্পদ আর টাকা নেওয়ার মতলবে ভালবাসার নাটক করেছে। - দেখুন এভাবে বলবেন না।অন্য কোন সমস্যাও তো থাকতে পারে। -থাকলে তো আপনাকে আগেই বলত। যাই হোক এখন কি করবেন? -বাড়ি ফিরে যাব এই সাহস টুকু পাচ্ছি না। জানিনা পরিবারের সবাই কি ভাবে গ্রহন করবে..তাই এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথই নেই। -এসব আপনি কি বলছেন.,দেখুন ভূল তো সবাই করে। আপনিও করেছেন।আর তাছাড়া সন্তান কোনো ভূল করলে বাবা-মা মাফ করবেই।তাই বলছি আপনি বাড়ি ফিরে যান। -কিন্তু_____ -কোনো কিন্তু না,চলুন আমি আপনাকে আপনার বাড়ি পৌছে দেব। এই বলে মেয়েটাকে রাজি করালাম। তারপর গাড়ি থেকে নেমে আবার রাজশাহীর পথে রওনা দিলাম।এবারের সফর একটু আলাদা।পাশে মেয়েটা যে । যাইহোক-অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মেয়েটার বাড়ি পৌছে গেলাম।কিন্তু কলি প্রথমে ঢুকতেনা চাইলেও আমার কথায় সে যায়। এখন সমস্যা হল সে আমাকেও তার সাথে নিয়ে যেতে চায়। কি আর করা ।আমিও গেলাম।এদিকে বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেছে যে এই বাড়ির বড় মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বাড়িতে ঢুকে বুঝতে পারলাম।প্রথমে তো সবাই আমাকেই সেই ছেলে মনে করেছিল। কলির বাবা শহরের নামকরা ব্যবসায়ী।উনি তো আমাকে দেখেই প্রচন্ড রেগে গেলেন আর কলিকে মারতে লাগলেন। তারপর আমি তাকে আটকালাম এবং পুরো ঘটনা খুলে বললাম।আসলে সবাই যথেষ্ট শিক্ষিত ছিল তাই খুব সহজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। যেহেতু আমি তাদের এত বড় একটা বিপদ থেকে বাচায় তাই কলির বাবা এবং পরিবারের সবাই আমাকে তাদের বাড়িতে কদিন থেকে যাওয়ার জন্য বলে।আমার কোনো সমস্যা না থাকায় আমিও রাজি হয়ে যাই।আসলে কলিকে আমার খুব ভাল লেগে যায় ।আর কলির পরিবারও এত ভাল যে আমি আর না করতে পারিনি। এর মধ্যে আমার আবার কলিকে ভাল লেগে যায়। পরদিন সকালে,..আমি আমার ঘরে বসে একটু কবিতা লিখতে বসছি এমন সময় দরজায় দাঁড়িয়ে কলি বলল.,. -কি করছেন? -এইত কবিতা লিখছি। -আপনি কবিতাও লিখেন নাকি?? -হুম লিখি তো,তবে মাঝে মাঝে । -আমাকে একটা শোনাবেন? -শোনাব,তবে_________ -তবে কি? -চোখে তোমার চাহনিতে কি যে আছে যাদু,, চলন তোমার নদীর মত কথায় আছে মধু। -কাউকে কি ডেডিকেট করে লিখা? -বলতে পারেন -হুম আপনি অনেক সুন্দর করে কথাও বলেন আবার লিখেন ও ভাল। -ধন্য তাহলে আমি আর আমার সৃষ্টি। -মানে? -কিছু না। এভাবেই আমার আর কলির কথা বাড়তে থাকল। দুদিন পার হল।এবার বাড়ি ফেরার পালা। ভাবছি কলিকে আমার ভালবাসার কথা জানাব।কিন্তু কিভাবে?তাই ঠিক করলাম কলিকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে জানাব। -এই যে কলি শুনছ? -জি বলুন -আজ আমি চলে যাচ্ছি,আর হয়ত আমাকে দেখবে না ।আর এই যে নাও এখানে একটা কবিতা লিখা আছে।পরে দেখ । -যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব? - বল,,, -আপনার কি কেউ আছে? -কেন বল তো? -এমনি কিছু না। -আচ্ছা কলি একটু ছাদে যাবে? -যাব ছাদের এককোনে কলি দাঁড়িয়ে আছে।দূরে আনমনে তাকিয়ে আছে।আজ ওকে কেমন জানি উদাস আর শূনা মনে হচ্ছে।আচ্ছা ও কি আমাকে পছন্দ করে। এসব ভাবতে ভাবতে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবার আর দেরি নয়।বলেই দিব আমার মনের কথা। -কলি একটা বলার ছিল -কি কথা? -(আমার তো রিতীমত কম্পন শুরু হয়েছে)কলির চোখের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে দিলাম -কলি যেদিন প্রথম তোমাকে কান্না মাখা চোখে তোমার মায়াভরা মুখখানি দেখেছি সেদিন থেকে তোমার জীবন সঙ্গী হবার স্বপ্ন দেখেছি। তুমি সবসময় আমার মনের ভিতরে বাইরে ঘুরে বেরাও।কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমার কান্না মুছে দেবার দায়িত্ব নেব।তোমাকে কখনও হারিয়ে যেতে দেব না। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি । কথাগুলি বলে চুপ করে আছি।কলি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখনিই কেদে ফেলবে। তারপর সে কিছু না বলে দৌরে নিচে চলে গেল। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না ।মনে হল সে আমার প্রস্তাবে রাজি না।কি আর করা অনেক প্রশ্ন আর বিষাদ নিয়ে সন্ধ্যায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম।একটু সামনে এগোতেই কে যেন পিছন থেকে হাত টেনে ধরল।কে দেখব তখনই সে আমাকে জরিয়ে থরল।বুঝলাম আমার ফুলের কলি আর কাদতে কাদতে বলল আমিও যে আপনাকে ভীষন ভালবেসে ফেলেছি।আর আমাকে ফেলে আপনি চলে যাচ্ছেন। -আরে পাগলি যেতে তো হবেই -কেন আমাকে নিয়ে যাবেন না?? -এভাবে না।মা কে বলে তোমাকে বধূবেসে নিয়ে যাব।আচ্ছা এবার তো তুমি করে বল। -না আমার লজ্জা করে এভাবেই শুরু হল ভালবাসার একটি নতুন অধ্যায়।
<সমাপ্ত>
No comments:
Post a Comment